দক্ষিণ দিনাজপুর: বুধবার বনধ্ ঘিরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার একাধিক জায়গায় বিজেপি - তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের মধ্যে বচসার জেরে পরিস্থিতি উৎতপ্ত হয়ে উঠল। আহত একাধিক বিজেপি কর্মী সমর্থক। জায়গায় জায়গায় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বিজেপি কর্মী সমর্থকদের, গঙ্গারামপুর থানার ফুলবাড়িতে লাঠি চার্জ পুলিশের। বনধ্ রুখতে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় বিভিন্ন জায়গায় পাল্টা টহল দিল তৃণমূল কর্মীরা। বুধবার সকাল থেকেই বনধ্-এর সমর্থনে রাস্তায় নেমে পিকেটিং শুরু করে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা৷
এদিন বালুরঘাটের নারায়ণপুর এলাকার পাবলিক বাসস্ট্যান্ড থেকে বেসরকারি বাস না চললেও নারায়ণপুর এলাকার উত্তরবঙ্গ রাস্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার স্ট্যান্ড থেকে বাস চলাচল ছিল স্বাভাবিক। বিজেপি কর্মী সমর্থকরা এদিন সরকারি বাস চলাচলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বনধ্ সমর্থনকারীদের বাধা দেয়। ঘটনাস্থল থেকে বিজেপির বালুরঘাট শহর মন্ডল কমিটির সভাপতি সমীর প্রসাদ দত্ত-কে আটক করে পুলিশ। বিজেপির ডাকা বনধ্-এর জেরে এদিন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সদর বালুরঘাটের ব্যস্ততম নিউ মার্কেট, ডাললপ মোড়, সাধনা মোড়, বিশ্বাসপাড়া মোড়, নারায়ণপুর এলাকার দোকানপাট ছিল বন্ধ। তবে অন্যান্য দিনের মত এদিনও বালুরঘাটের বড় বাজারের সবজি মার্কেট ছিল খোলা। অফিস কাছারি ছিল খোলা। তবে কাজের প্রয়োজনে অফিসগুলিতে সাধারণ মানুষদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। এদিন তপন বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক বুধরাই টুডু-র নেতৃত্বে বালুরঘাটে জেলা সমাহর্তালয়ের সামনে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা বনধ্-এর সমর্থনে পিকেটিং শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিজেপি বিধায়ক বুধরাই টুডু-কে চ্যাংতোলা করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে রাস্তায় বসে পড়েন বিজেপি বিধায়ক। অপরদিকে বনধ্-এর বিরোধিতায় এদিন সকাল থেকেই রাস্তায় বাইক নিয়ে টহল দিতে দেখা গেছে তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের। গঙ্গারামপুরে তৃণমূল নেতা প্রশান্ত মিত্র-র নেতৃত্বে বনধ্-এর বিরোধিতায় মিছিল করে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। উল্টো দিকে গঙ্গারামপুরে বনধ্-এর সমর্থনে মিছিল বের করে বিজেপি কর্মী সমর্থকরাও। মিছিল দুটি গঙ্গারামপুরের চৌমাথা মোড়ে এসে উপস্থিত হলে দুই দলের কর্মীরা বাকবিতন্ডায় জড়ায়। পরিস্থিতি উৎতপ্ত হয়ে উঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কমব্যাট ফোর্স নামায় পুলিশ। বুনিয়াদপুরে পুলিশের সামনে বনধ্ সমর্থনকারীদের মারধোরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। ঘটনায় কয়েকজন বিজেপি কর্মী আহত হন। বিজেপির বুনিয়াদপুর শহর মন্ডল কমিটির সভাপতি দীপেশ বসাক-এর অভিযোগ বনধ্ রুখতে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের মারধোর করা হয়েছে, তাতে ৭-৮ জন বিজেপি কর্মী সমর্থক আহত হয়েছেন। অপরদিকে তৃণমূল নেতা তথা বুনিয়াদপুর পৌরসভার পৌর প্রশাসক কমল সরকার-এর বক্তব্য তারা কর্মনাশা বনধ্কে সমর্থন করেন না। মঙ্গলবার বিজেপির ডাকা বনধ্ ঘিরে গঙ্গারামপুর থানা এলাকার অন্তর্গত ফুলবাড়িতে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের পিকেটিং চলার সময় পুলিশ অফিসাররা পিকেটিং বন্ধের চেষ্টা করলে বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরুপ চৌধুরী-র সঙ্গে তীব্র বাকবিতন্ডা শুরু হয় পুলিশের। ঘটনার সময় পুলিশ বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরুপ চৌধুরী-কে আটক করে এবং বনধ্ সমর্থনকারীদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করলে পরিস্থিতি উৎতপ্ত হয়ে উঠে। অপরদিকে এক তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী এক সাংবাদিককে ফোনে প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়। যে হুমকির কল রেকর্ডিং ভাইরাল হতেই নিন্দার ঝড় বইতে শুরু করেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। বনধ্ -এর সমর্থনে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক-এর বালুরঘাট শাখার গেটে দলীয় পতাকা লাগাতে এসে বনধ্ প্রতিহত করা তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের রোষের মুখে পড়েন এক বিজেপি কর্মী। সবমিলিয়ে বিজেপির ডাকা বনধ্ ঘিরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও বুধবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ৩টি শহর বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর ও বুনিয়াদপুরে পরিস্থিতি ছিল উৎতপ্ত।
Total Post View : 42435